
উত্তরায়ণ আবাসিক প্রতিষ্ঠান এমন এক মধুর ও তৃপ্তিদায়ক ছায়া , যার ছায়াতলে
বিশেষভাবে সক্ষম ছেলেমেয়েরা বেড়ে উঠতে থাকে ।
নীতিবান , সত্যবাদী , পরিশ্রমী , সময়নিষ্ঠ , ক্ষমাশীল ও শুভাকাঙ্ক্ষী কর্তৃপক্ষ এবং কর্মীরা এই কল্যাণকামী প্রতিষ্ঠান
গঠনের মূল কারিগর।
হুগলি জেলার আরামবাগে উত্তরায়ণ আবাসিক সেন্টার, গত বাইশ বছর ধরে প্রণব কুমার সেনের আশ্রয়স্থল । সম্পর্কে প্রণব আমার একমাত্র শ্যালক । প্রণবের বাবা জেলা জলপাইগুড়ির এক প্রত্যন্ত চা – বাগানে কাজ করতেন । জন্ম থেকেই প্রণব সামান্য মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত । ২০০৩ সালে প্রণবের বাবার মৃত্যুর পর , প্রণবের আচরণে আমূল পরিবর্তন এলো ।
ঔদ্ধত্য , অকারণে অতিরিক্ত রাগ , নিয়ম নিষ্ঠার অভাব , উদ্দামতা , অনিয়ম , খুব বেশি পরিমাণে খাবারে আগ্রহ ইত্যাদি সব কিছুই যেন প্রণবের উপর চেপে বসেছিল ।
অবশেষে ২০০৩ সালের শেষদিকে , এক শুভক্ষণে আরামবাগের উত্তরায়ণে প্রণবকে ভর্তি করানো হলো ।
ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী , উত্তরায়ণে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং নিয়মিত সুষম আর পুষ্টিকর খাবার খেয়ে
প্রণবের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো হতে থাকে । উত্তরায়ণে গান – আঁকা – যোগব্যায়াম – অল্প লেখাপড়া – প্রতি বছর নিয়ম করে বিভিন্ন পর্যটন স্থানে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া – নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ইত্যাদি প্রণবের জীবনে নতুন রুপোলি রেখা বয়ে আনে । এরই মধ্যে দীর্ঘ দুই পেরিয়ে গিয়েছে । প্রণবের বয়সও ৫০
পেরিয়েছে । আজ প্রণব উত্তরায়ণের একজন স্থায়ী বাসিন্দা।
বলতে দ্বিধা নেই , আজ প্রণবের মধ্যে উদ্ভাসিত হয়েছে বিবেকবোধ, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা, সহানুভূতি, উদারতা ও আন্তরিকতা।
এজন্য সম্পূর্ণ কৃতিত্বের দাবিদার উত্তরায়ণের প্রতিটি কর্মীর তথা পরিবারের প্রতিটি সদস্যের ।
একথা আমরা সবাই জানি, একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের পথ রাতারাতি তৈরি হয় না । অধ্যবসায় এবং কঠোর পরিশ্রমের সমন্বয়ে সাফল্য আসে । আর এই সাফল্যের জন্য বহু মানুষজনের প্রচুর ত্যাগ স্বীকার করতে হয় । এঁদের প্রত্যেকের কাছে আজ আমাদের পরিবার ঋণী ।
উত্তরায়ণ নিজেই যেন এক রোল
মডেল ।
মানবিক প্রতিষ্ঠান উত্তরায়ণ দীর্ঘজীবী হোক ।।
চরৈবেতি , চরৈবেতি ……
— কল্যাণ দাস ,
( প্রণবের জামাইবাবু )